আজকাল কী হচ্ছে!!!জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন) / ধর্ম প্রচার নিয়ে কিছু কথা:

আপনি লক্ষ্য করেছেন কি?
এক
পৃথিবীতে শ্রোতা, দর্শক, পাঠক যেমন ৩ প্রকার,
ঠিক তেমনি, বক্তা বা ধর্ম প্রচারকও ৩ প্রকার।
এক ধরনের, যারা ধর্ম প্রচার করে নিজেদেরকে অন্যদের সামনে বিদ্বান বা জ্ঞানী প্রমাণ করতে ।
আর এক ধরনের, যারা ধর্ম প্রচার করে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে অর্থাৎ পরিস্কারভাবে বললে, টাকা উপার্জনের ধান্দা নিয়ে ।
এবং, তৃতীয় ধরনের ধর্ম প্রচারক, যারা ধর্ম প্রচার করে এই উদ্দেশ্য নিয়ে যে, তারা মনে করে, ‘ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন ও প্রচার করা’ হচ্ছে
সকল সৃষ্টির মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে তাদের প্রতি অর্পিত একটি পবিত্র দায়িত্ব ।
এ বিষয়টি লক্ষ্য করলেও আমরা অবাক না হয়ে পারিনা যে, উপরোক্ত ৩ ধরণের ধর্ম প্রচারকদের কেউ-ই ভুলের উর্ধ্বে নয় (অবশ্য নবীগণ ব্যতীত)। উপরোক্ত ৩ ধরনের ধর্ম প্রচারকদের প্রত্যেকেই প্রায়ই বা বিভিন্ন সময়ে আক্রমণাত্মক হয়ে থাকে(নবীগণ ব্যতীত) , একে অপরের প্রচণ্ড বিরোধিতা করে ।
স্রষ্টার প্রেরিত সত্যিকারের নবী যারা, তারা ঠিক ততটাই জ্ঞান অর্জন করেছিলেন, স্রষ্টা তাদেরকে যতটা জ্ঞান অর্জন করতে বলেছিলেন। তারা নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে হলেও ঠিক ততটাই দায়িত্ব পালন করেছিলেন, স্রষ্টা তাদেরকে যতটা দায়িত্ব পালন করতে বলেছিলেন ।
এখানে, একটি বিষয় পরিস্কার করে বলা জরুরি যে, মানুষ মাত্রই ভুলশীল; তাই, নবী, রাসুলগণও মাত্র কয়েকটা হলেও ভুল করেছিলেন । কী কী ভুল করেছিলেন, সেই বিষয়ে অন্য কোনো দিন আলোচনা করবো, ইনশাআল্লাহ্ ।
তবে, ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন ও প্রচার এর ক্ষেত্রে তারা পরিপূর্ণ দায়িত্বশীল ছিলেন ; প্রকৃত শিক্ষা বা সুশিক্ষা অর্জন ও প্রচারের ক্ষেত্রে এতটুকুও দায়িত্ব তারা অবহেলা করে, অহংকার করে বা কোনো কারণেই, কোনোভাবেই এড়িয়ে যাননি ।
আর, আজকাল কী হচ্ছে!!!
যারা নাকি জ্ঞানী, যারা নাকি ধর্ম প্রচারক, তাদের অধিকাংশই এতটা অহংকারী যে, তারা যেন ভুলেই গেছে যে, আমরা কেউ-ই ভুলের উর্ধ্বে নই। জ্ঞানের, প্রকৃত শিক্ষার সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে আমাদের সবার । অথচ, আমাদের অধিকাংশই এতটাই অহংকারী যে, কেউ যদি ধর্মীয় বই যেমন কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস থেকে রেফারেন্স উল্লেখ করে ধর্মীয় জ্ঞান প্রচার করে, তবুও তার আলোচনায়, সমালোচনায় কর্ণপাত করিনা বা কর্ণপাত করলেও নিজেকে পরিবর্তন এর চেষ্টা করিনা (নিজের জ্ঞান এর ভাণ্ডারকে পরিপূর্ণ বা যথেষ্ট মনে করে)।
এ অংশটি আপাতত এটুকু বলেই শেষ করছি যে, একজন ভালো বক্তা হতে গেলে প্রথমত একজন পরমতসহিষ্ণু ভালো শ্রোতা হতে হবে, একজন ভালো লেখক হতে গেলে আগে একজন ভালো পাঠক হতে হবে ।
ধর্মের বাণী প্রচার করতে গেলে আগে নিজেকে পর্যাপ্তভাবে পরিবর্তিত করতে হবে যেমন _ অহংকারমুক্ত হতে হবে, নির্ভেজাল জ্ঞান ও সুশিক্ষা অর্জন করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী নিজেও আমল বা কাজ করে যেতে হবে । কখনোই নিজেকে পরিপূর্ণ বা স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাববেন না । সীমাবদ্ধতা আপনার, আমার থাকতেই পারে । আপনি বক্তাই হোন আর শ্রোতাই হোন, আপনি লেখক হোন কিংবা পাঠক হোন, কেউ আপনার ভুল ধরিয়ে দিলে তাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না। অবশ্য কাউকে অন্ধভাবে অনুসরণও করবেন না। কেউ জ্ঞানগর্ভ বা শিক্ষণীয় কিছু বললেই তা নির্ভুল ও অনুসরণযোগ্য মনে করবেন না । বরং, যেকোনো বক্তার, যেকোনো লেখকের বক্তব্য শোনার বা অধ্যয়নের পরে তা গভীরভাবে চিন্তা করবেন, পবিত্র কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস বইয়ের সাথে মিলিয়ে নেবেন । যদি আপনার গভীর চিন্তা ও বিশুদ্ধ হাদীস এর সাথে, পবিত্র কুরআন এর আলোকে কারো বক্তব্য সমর্থনযোগ্য, অনুসরণযোগ্য মনে হয়, কেবল তাহলেই সেই বক্তার বা সেই লেখকের উপদেশ গ্রহণ করবেন, মেনে চলবেন, প্রচার করবেন ।
জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন) / ধর্ম প্রচার নিয়ে কিছু কথা:
( আশিক সিরাজ প্রিয়, সহকারী শিক্ষক, ইংরেজি,
যোগাযোগ_ ০১৫১৫ ২৫৮ ২১২)