তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি শুরু হয়ে গেছে ?

মহাযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে,
Scenario: 1 . পৃথিবীর বুকে এক অদৃশ্য সন্ধ্যা নেমে এসেছে। সূর্য আর আগের মতো দিগন্ত ছুঁয়ে হাসে না, চাঁদের আলোতেও নেই সেই পুরনো কোমলতা। সব কিছু এক ধরনের ভয় আর অস্থিরতায় মোড়া। বাতাসে টের পাওয়া যায় বারুদের গন্ধ, আকাশজুড়ে ঝুলে আছে অনিশ্চয়তার ছায়া। মানুষ, শহর, সভ্যতা—সব মিলিয়ে পৃথিবী ঢুকে পড়েছে এক নতুন অধ্যায়ে। ইতিহাসে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। . শহরগুলো নীরব হয়ে পড়েছে। যে জায়গাগুলোতে একসময় ছিলো জীবনের গর্জন, আজ সেখানে কেবল ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। দোকানপাট বন্ধ, রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুড়ে যাওয়া গাড়ি, খুলে পড়া ভবনের ইট-পাথর। মানুষের চোখে মুখে বিস্ময়, বিষণ্নতা, এবং হাহাকার। অর্থনীতি মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে। রাজনীতি হয়ে উঠেছে এক দুর্বোধ্য অন্ধকার, যেখানে সবকিছু কেবল নিজেদের স্বার্থেই ঘুরপাক খায়। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। . এই যুদ্ধ আর কোনো সীমানা বা ভূখণ্ডের নয়, এটা আদতে এক ধর্মীয় লড়াই। যেখানে কিছু মুমিন ঈমানের দীপ্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে ফিতনার স্রোতের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, মুনাফিকরা মুখে হাসি আর মনে বিভ্রান্তি নিয়ে কাফেরদের সাথে হাত মিলিয়ে সেই ফিতনার অংশ হয়ে যাচ্ছে। এক দশক বা দুই দশক আগেও যেসব জায়গা ছিলো নিরাপদ, আজ সেখানেই যুদ্ধের ধোঁয়া। বাংলাদেশের বুকেও সেই ছায়া নেমে এসেছে। পাশের রাষ্ট্রগুলোতে যুদ্ধ তীব্র হচ্ছে, আর বৈশ্বিক চাপ বাড়ছে প্রতি মুহূর্তে। দেশের সরকার আপস আর বোঝাপড়ার মাধ্যমে সময়টাকে ঠেকিয়ে রাখতে চাইছে, কিন্তু চারপাশে শোনা যাচ্ছে আতঙ্কের পদধ্বনি। . . এমন একটা সময়ে আপনি যদি সেই ধ্বংসস্তূপের মাঝখানে থাকেন, নিজের জীবন কীভাবে পরিচালনা করবেন? যখন কাজ থাকবে না, উপার্জনের পথ বন্ধ, আর চারপাশে ক্ষুধার গুমোট, তখন সংসার চালানোর জন্য কোন পাথেয় বেছে নেবেন? যখন মুখরোচক খাবারের বদলে অভাবের থালা সাজানো থাকবে, তখন আপনি কীভাবে নিজের প্রিয়জনদের সামনে শান্ত মুখে দাঁড়াবেন? . আপনি এখন ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন, ভাবুন তো। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখছেন শিশু মুখে দুধ পায় না, বাজারে খাবার নেই, রাস্তায় নিরাপত্তার ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই। তখন আপনার ঈমান কী বলবে? যদি উপার্জনের সব হালাল পথ এক এক করে বন্ধ হয়ে যায়, আপনি কি পারবেন পরিবারের সবাইকে বোঝাতে—”হারামের চেয়ে ক্ষুধার্ত থাকা উত্তম?” যদি কখনো সামনে এমন সময় আসে যেখানে আপনার পরিবার না খেয়ে শুয়ে পড়ছে, আর আপনার সামনে খোলা আছে একটি সহজ কিন্তু হারাম রিজিকের দরজা, তখন আপনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন? . তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা হলো—এই অন্ধকার সময়ে, যখন চারদিকে কেবল আতঙ্ক আর নিরবতা, আপনি কীভাবে নিজের ঈমান ও আমলকে ধরে রাখবেন? . আপনি কীভাবে এই প্রচণ্ড চাপের মাঝেও দ্বীনের পথে অটল থাকবেন? নতুন কিছু শেখার সুযোগ থাকবে না, সময় থাকবে না, মন থাকবে না—থাকবে কেবল দুশ্চিন্তা আর হতাশার পাহাড়। পরিবারের চিন্তায় মন ভেঙে যাবে, ইমানের দোহাই দিতে হবে প্রতিনিয়ত, আর বাইরের পৃথিবীর কুয়াশায় বেরোনো কঠিন হয়ে পড়বে। তখন হয়তো আপনাকে ইবাদত করতে হবে চোখের পানি দিয়ে। হতে হবে এমন একজন যার জন্য “সুন্নাহ” মানে হবে একমাত্র পথ, আর “সবর” হবে বেঁচে থাকার একমাত্র ভাষা। . আজ থেকে দশ বিশ বছর পর এমন কোনো সময় আসবে কি না আমাদের জানা নেই। তবে এমন একটা সময়ের জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। ঈমানের আলোকে পাথেয় বানানো শুরু করতে হবে। কারণ সেই দিনগুলো সভাইকে জানিয়ে প্রস্তুতির সুযোগ দিয়ে তারপর আসবে না। এটা আচমকা এসে মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে এলোমেলো করে দেবে। তবে সকল খারাপ অবস্থায় গাজার খান ইউনুসের বাসিন্দাদের মতো যারা শত ব্যাথা সত্ত্বেও ঈমান নিয়ে টিকে থাকবে, তারাই হবে প্রকৃত বিজয়ী। . .
Scenario: 2 . ধরুন, আরো দুই তিন যুগ পেরিয়ে গেছে। পৃথিবীর প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়েছে ফিতনার ঘন ছায়া—গভীর, জটিল, এবং ভয়াবহ। এমন এক সময়ের কল্পনা করুন, যখন আসমানের শান্তির ফায়সালা বাস্তব হয়ে ধেয়ে আসছে। পৃথিবীর সব অন্ধকার আর অস্থিরতা দূর করতে তিনি আগমন করলেন—ইমামুল আখিরুজ্জামান, আল মাহদি আলাইহিস সালাম। তাঁর আগমনের আভাস পাওয়া মাত্রই দাজ্জালের অনুসারীরাও প্রস্তুত হতে শুরু করলো তাদের ‘মাসিহুল কাজ্জাব’-এর জন্য। . কিন্তু ততদিনে পৃথিবী ডুবে গেছে গুনাহের নোংরা স্রোতে। শহরের বাতাসে শুধু পাপের গন্ধ, আর প্রতিটি প্রাণ প্রার্থনা করছে মুক্তির জন্য। যেন কেউ এক অমল আলোয় উড়ে যেতে চায় অন্ধকার পেছনে ফেলে। এই ধরণী দাঁড়িয়ে আছে এক শঙ্কার সন্ধিক্ষণে। . যেখানে আকাশ থেকে আজাবের চূড়ান্ত ঘোষণা নেমে আসছে। এমন সময়ে আপনার কাছে কি ক্যারিয়ার, পারিবারিক টেনশন, জীবনের স্বপ্ন—এসবের কোনো মূল্য থাকবে? আপনি কি সত্যিই তখনও চিন্তা করবেন প্রমোশন, বাড়ির কিস্তি, কিংবা বিদেশে সেটেল হওয়ার কথা? . যখন দুর্ভিক্ষ পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে, শিশুদের কান্না বাতাসে ভেসে বেড়াবে খাবারের অভাবে—তখন কি পারবেন ‘হালাল’ পথ বেছে নিতে? যখন ক্ষুধা মনকে দুর্বল করে তুলবে, তখনই হবে ঈমানের আসল পরীক্ষার মুহূর্ত। তখন তো আর কেউ পাশে থাকবে না। থাকবে না অফিস, ইনকাম বা বিলাসী সংসার—থাকবেন শুধু আপনি, আর আপনার ঈমান। . এমন ভয়াল অন্ধকারে কেবল একটি জিনিসই আপনাকে আলো দেখাতে পারে—ইলম। হ্যাঁ, শুধুমাত্র ইলমই পারে আপনাকে শত ফিতনার ফাঁদ থেকে রক্ষা করতে। কিন্তু দাজ্জালের সেই অসীম ফিতনা নিয়ে আপনি কতটুকু জানেন? তখনকার ভয়াবহতা কল্পনা করতে পারেন? সেই সময় নারীদের এমন অবস্থা হবে যে, তাঁদের রক্ষা করতে খাটের সাথে বেঁধে রাখতে হবে! . আপনি যদি একজন নারী হন, তাহলে এই ফিতনা সম্পর্কে কতটুকু পড়েছেন, জেনেছেন বা প্রস্তুতি নিয়েছেন? আর একজন পুরুষ হিসেবে—আপনার ঘরে তো স্ত্রী আছে, কন্যাসন্তান আছে। আপনার দায়িত্ব কি তাদেরকে শুধু খেতে পরতে দেওয়া, নাকি এই ভয়াবহ ফিতনা থেকে রক্ষা করাও আপনার অন্যতম দায়িত্ব? . আমাদের জন্য হাতেগোনা কয়েকদিন ক্ষুধার্ত থাকা হয়তো সম্ভব। কিন্তু কয়েক বছর অনাহারে থাকার মানসিক প্রস্তুতি কি আপনার আছে? এমন দিন আসবে—যখন মানুষ নিজেই বলবে, “আমি শহর ছেড়ে পাহাড়ে চলে যাবো, একা থাকবো, কিন্তু ঈমান বাঁচিয়ে রাখবো।” . ভাবুন তো, আপনি যদি তখন উচ্চশিক্ষিত হন, বিশ্বমানের ডিগ্রি থাকে, আর আপনার সামনে থাকে সফল ভবিষ্যতের অফার—তবুও আপনি কি সেইসব কুরবানি করতে পারবেন? আপনি কি পারবেন প্রযুক্তির ঝলকানো দুনিয়া ছেড়ে নির্জন জীবন বেছে নিতে? না, এটা এত সহজ নয়। সবাই সুখের জীবন ছাড়তে পারবে না। এই কুরবানি, এই অগ্নিপরীক্ষা, এই দুনিয়াকে ছাড়ার সাহস কেবল তাদের পক্ষেই সম্ভব, যাদের হৃদয়ে রয়েছে দৃঢ় ইমান, আর যাদের মগজে গেঁথে আছে সঠিক ইলম। . ঈমান ছাড়া কেউ এই ফিতনার সময়কে জয় করতে পারবে না। ইলম ছাড়া কেউ বুঝতেই পারবে না ফাঁদ কোথায়। আর যদি বুঝতেই না পারেন, তাহলে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগও থাকবে না।. . .
Scenario: 3 . ধরুন, আগামী বিশ-ত্রিশ বছর পৃথিবীতে কোনো যুদ্ধ হলো না। না রাশিয়া, না আমেরিকা, না চীন, না ইরান বা হিস্রায়েল—কেউ আর বোমা ফেললো না, ড্রোন উড়ালো না, বা ট্যাংক নামালো না। সব কিছু শান্ত নদীর মতোই বয়ে যাচ্ছে—শান্ত, নিরব, সহনশীল। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আধুনিক পৃথিবী মুমিনের নিরাপদ। কারণ নতুন পৃথিবীর ভেতরে এমন এক ফাঁদ পাতা, যেখানে যুদ্ধ নেই ঠিকই, কিন্তু প্রতিটা নিঃশ্বাসেই মিশে আছে বিষ। সেই বিষ মুসলমানদের আত্মায় ঢুকে যাচ্ছে, মন-মগজে ঘর বাঁধছে। এখানে যুদ্ধের গোলাগুলির শব্দ নেই, কিন্তু প্রযুক্তির নিঃশব্দ আক্রমণে আমাদের ঈমান আর অন্তর ভেঙে যাচ্ছে নীরবে। . আজকের পৃথিবী এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশের মুখে এক আধুনিক বিপ্লবের মাঝপথে দাঁড়িয়ে। AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এখন যা শুরু হয়েছে, তা একদিন যাবে AGI পর্যন্ত—এক এমন পর্যায়, যেখানে মানুষের কোনো নির্দেশনা ছাড়াই যন্ত্র নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেবে। তখন মানুষ শুধু দর্শক হয়ে থাকবে। এটা একটা ছায়ার মতো, যার অস্তিত্ব আছে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ নেই। বর্তমান প্রযুক্তির উন্নতির গতি আলোর মতো। কেউ চাইলেও আটকাতে পারবে না। আমাদের চোখের সামনেই কৃত্রিমতার কাছে জীবন বদলে যাচ্ছে, চিন্তা পাল্টে যাচ্ছে, সত্য-মিথ্যার সীমারেখা মুছে যাচ্ছে। . এই প্রযুক্তির প্রভাবে শুধু বাইরের জগৎ না, আমাদের ভেতরের জগতও পাল্টে যাচ্ছে। অন্তর হয়ে গেছে মসৃণ স্ক্রিনের মতো—উজ্জ্বল, স্পর্শে সংবেদনশীল, কিন্তু ভেতরে ঠান্ডা, একা আর অনুরণনহীন। ফেসবুকের এক লাইকের জন্য মানুষ আজ বিচলিত হয়, অথচ গাজার কোনো শিশুর কান্না তার মনে স্পর্শ ফেলে না। ভাবনাগুলো এতটাই হালকা আর প্লাস্টিকের মতো হয়ে গেছে, যে কোনো বাস্তব কষ্ট আমাদের আর নাড়া দেয় না। . এতকিছুর পরেও আমরা ‘ক্যারিয়ার’ আর ‘সাকসেস স্টোরি’ নিয়ে ব্যস্ত, অথচ আমাদের চারপাশে নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা ধীরে ধীরে ঈমান হারিয়ে ফেলছে, তাদের মন অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। বাবা-মায়েরা জীবিকার জন্য দৌড়াচ্ছে, অথচ ঘরের ভেতর ভেঙে পড়ছে সম্পর্ক, হারিয়ে যাচ্ছে ভালোবাসা আর বোঝাপড়া। নারীরা সন্তানদের রক্ষা করতে পারছে না, বাবা-মায়েরা নিজেদের মধ্যে বিভেদে জর্জরিত। এই বাস্তবতায়, আপনি কি পারবেন আপনার পরিবারকে রক্ষা করতে? আপনার স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবাকে নিয়ে টিকতে? যখন সমাজ ধীরে ধীরে মানবিকতা হারিয়ে ফেলবে, তখন আপনি কি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারবেন, “আমাদের জীবনের ভরসা একটাই — ঈমান”? . তাই একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে পৃথিবীর নতুন যুগের জন্য প্রস্তুতি এখনই শুরু করত্র হবে। যারা এখনো মনে করে আল্লাহর পথে চলা মানে জীবনের আনন্দ বিসর্জন দেওয়া, যারা এখনো ভাবে সফলতা মানে টাকা-পয়সা, খ্যাতি আর সামাজিক অবস্থান—তাদের চোখ খুলে দিতে হবে। কারণ সামনে এমন এক সময় আসতে পারে, যেখানে চাকরির দরজা বন্ধ হয়ে যাবে, ব্যবসার পরিবেশ ফিতনার আগুনে পুড়ে যাবে, শিক্ষার দরজা কঠিন হয়ে উঠবে, আর জীবন হয়ে উঠবে কেবল টিকে থাকার লড়াই। তখন আর নিজের আত্মা, পরিবার বা ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু করার সময় বা সুযোগ থাকবে না। . . আমরা জানি না, সামনের পৃথিবী কেমন হবে। তবে এটুকু স্পষ্ট, এই পৃথিবীর অবস্থা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এত দ্রুত যে আমরা কখনও টেরই পাই না। কবে যেন ঘুম থেকে উঠে দেখব আমাদের পরিচিত সবকিছু বদলে গেছে। এই পরিবর্তনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, প্রশ্ন আসে—আমরা কি আদৌ প্রস্তুত? আমাদের ইমান, আমল আর ইলমের ভিত কতটা মজবুত? আমরা কি এই ভিতরের জগৎ নিয়ে সচেতন, নাকি বাইরের ইস্যু আর আলোচনাই আমাদের একমাত্র ব্যস্ততা? . আজ একটা প্রজন্ম প্রকাশ্যেই ঈমান হারাচ্ছে, অথচ আমরা তা অনুভবই করছি না। বইয়ের প্রতি অনাগ্রহ এখন সমাজে এক প্রাকৃতিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যাওয়ার ব্যাধি এখন ভয়াবহ মহামারী। এর মাঝে পারিবারিক অশান্তি, দাম্পত্যের ভাঙন, সন্তানের মানসিক বিচ্ছিন্নতা তো আছেই। হয়তো এগুলোই সামনে আরো ভয়াবহ পর্যায়ে যাবে। . এই কঠিন বাস্তবতায়, আপনি কি প্রস্তুত? এমন পরিস্থিতির জন্য, যেখানে আপনাকে সর্বাবস্থায় দ্বীনকে প্রাধান্য দিয়ে চলতে হবে? যদি আগামীতে জাগতিক কর্মক্ষেত্রে অশ্লীলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, যে সেখানে যাওয়া আর সম্ভব না, তখন আপনি নিজে কিছু করতে পারবেন? সেই যোগ্যতা কি আপনার আছে? যদি সমাজের অবস্থা একসময় এতটাই কঠিন হয়ে পড়ে যে, বাহ্যিক জীবনের সকল আরাম-আয়েশ ছেড়ে, একা কোনো প্রান্তে দূরে গিয়ে থাকতে হয়, তখন আপনি তা করতে পারবেন? . . এই প্রশ্নগুলো প্রথমে আমি নিজেকে করেছি, তারপর আপনাকে করছি। কারণ এখন সময় নিজের দিকে ফিরে তাকানোর। অন্যরা এগিয়ে যাচ্ছে, নিজের মতো করে। আর আমরা? আমরা কোথায় আছি, কী করছি, সেটা তো জানা দরকার। শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলা, ‘ইস্যু’ নিয়ে তর্কে নামা, ট্রেন্ডের পেছনে দৌড়ানো—এসব তো নিজেদের উন্নতি নয়। বরং নিজের আত্মার দিকে তাকানো, নিজের পরিবার, ঈমান—এগুলো আজ সবচেয়ে জরুরি। . এই কথাগুলো বলার পেছনে একটা বাস্তবতা আছে। আপনি আজ যা করতে চান—ইলম অর্জন, আমল করা, ইবাদতে মনোযোগ দেয়া, দ্বীনের পথে কাজ করা, স্ত্রী-সন্তানদের প্রতি দায়িত্ববান থাকা, বাবা-মায়ের সেবা, লেখালেখি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চতর পড়াশোনা—এসব কিছুই এখনো আপনার সাধ্যের মধ্যে আছে। অর্থাৎ আপনি চাইলেই যেকোনো সময় তা করতে পারবেন। কেউ আপবাকে বাঁধা দিবে না। কিন্তু যদি এই পৃথিবী আকস্মিক বদলে যায়? যদি বাস্তবতা এমন কঠিন হয়ে ওঠে, যেখানে নিজের ঈমান টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, তখন আর স্বাভাবিক আমল করারও সুযোগ পাবেন না। তখন চেষ্টা করলেও হয়তো সময় ও বাস্তবতা আপনাকে ইবাদত বা দ্বীনের দিকে এগোতে দেবে না। . এখন সবাই যুদ্ধাবস্থা আর রাজনীতির ইস্যু নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। সবাই নিজের বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে। নতুন করে এসব নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। এতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কোনো ফায়দা নেই, শুধু অনলাইন ব্যস্ততা বাড়ে। আমাদের কাজ হওয়া উচিত—নিজের উন্নতির দিকে ফোকাস করা। আগামী দশ পনেরো বা বিশ বছরে বড় কিছু পৃথিবীতে ঘটতে যাচ্ছে—এটা বুঝতে রকেট সায়েন্স জানা লাগে না। কিন্তু বুঝেও যদি কেউ প্রস্তুতি না নেয়, তবে ক্ষতিটা তার নিজেরই। . মুমিন অনর্থক বিষয় নিয়ে পড়ে থাকে না। সে সবসময় বাহ্যিক অবস্থার ব্যাপারে সচেতন থাকে। কারণ প্রকৃত মুমিন দূরদর্শী হয়। সে আগেভাগেই হিসাব করে, ভবিষ্যতের কঠিন সময়ের কথা মাথায় রেখে নিজের ঈমান রক্ষার সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। এটাই ছিল সাহাবায়ে কেরামের দৃষ্টিভঙ্গি। তারা যখন কোনো ফিতনার কথা শুনতেন, প্রথমেই বলতেন—”ইয়া রাসুলুল্লাহ ﷺ! সেই ফিতনা কেমন হবে?” এরপরেই জিজ্ঞেস করতেন, “আমরা কীভাবে তা থেকে নিজেদের রক্ষা করবো?” . ফিতনা নিয়ে পড়ে থাকাও ফিতনা। সমস্যা আর ইস্যু নিয়ে অতিরিক্ত মগ্ন হয়ে থাকা বিপদ। বরং আমাদের উচিত, সাহাবীদের মতো নিজেদের আত্মা, পরিবার ও ঈমানকে রক্ষা করার প্রস্তুতি নেয়া। এখনই নিজের দিক থেকে চোখ তুলে, আল্লাহর দিকে ফিরে তাকানোর সময়। কারণ ফিতনার সময় ধেয়ে আসছে, নিঃশব্দে, নিশ্চিতভাবে।
লেখক : বায়েজীদ বোস্তামী
অনুবাদক : উদ্দেশ্যহীন আর কত দিন ?