জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন)/ ধর্ম প্রচার নিয়ে কিছু কথা :

দুই.
পরমতসহিষ্ণুতা মানুষের সবচেয়ে বড় গুণগুলোর একটি । আর, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া, অন্যায়কে সমর্থন করা মানুষের সবচেয়ে নিকৃষ্ট দোষগুলোর একটি ।
কেউ আপনাকে কিছু বলতেছে; আর, আপনি তা গুরুত্ব দিয়ে, মনোযোগ দিয়ে শুনছেন না_ এটা চরম বেয়াদবি । এমনকি, সেই ব্যক্তির নিকট থেকে সেই কথাটি যদি আপনি আগেও শুনে থাকেন, তবুও ধৈর্য্য সহকারে, ভদ্রভাবে, বিনীতভাবে তার কথাটি আপনার শোনা উচিত । হয়তো তার বলা প্রথমের কয়েকটি কথা তিনি আগেও বলে থাকতে পারেন। আবার, হয়তো সেই কয়েকটি পুরনো কথার পরে নতুন কিছু কথাও থাকতে পারে । মূলত, কারো কথায় কান না দেয়া, অবহেলা করা হচ্ছে তাকে চরমভাবে অপমানিত করা । অবশ্য, হ্যাঁ, কোনো কারণে আপনার মন খারাপ থাকলে বা কারো প্রতি আপনি কোনো কারণে খুব রেগে থাকলে ঐ সময়ে কারো দেয়া সুমধুর উপদেশবাণীও বিষের মতো লাগে । তখন আপনি তাকে সুন্দরভাবে আপনার যে মন খারাপ, তা বলবেন এবং পরে সময়, সুযোগ হলে ঐ বিষয়ে তার সাথে কথা বলবেন, একথা বলে তার নিকট থেকে সুন্দরভাবে ক্ষমা চেয়ে নেবেন ।
আর, কতগুলো লোককে তো যথেষ্ট স্বাভাবিক মানুষের তালিকাতেই রাখা যায় না। যেমন _
একজন লোক তার কথা বা উপদেশ শুনতে চাচ্ছে না; আর, সে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে পরামর্শ বা উপদেশ দিতে চাচ্ছে । অথচ, কোনো কোনো পরিস্থিতিতে কাউকে সাহায্য করতে যাওয়ার আগে, কাউকে উপদেশ বা পরামর্শ প্রদানের আগে তার নিকট অনুমতি নেয়া উচিত যে, তার নিকট থেকে সে কোনো রকম সাহায্য বা উপদেশ বা পরামর্শ চায় কিনা ।
কিছু লোক নিজেরাই বিভিন্ন আপত্তিকর কিছু ভুলে ভরা। অথচ, এরাও কিনা অন্যদের ভুল ধরে, অন্যদেরকে ত্রুটিপূর্ণ প্রমাণ করার চেষ্টা করে । এমনকি, যাদের ভুল ধরার যোগ্যতাই নাই, তাদেরও ভুল ধরতে যায় এসমস্ত আজব চরিত্রের লোক ।
কিছু লোক আছে, যারা উগ্র মেজাজের । কোনো কথা তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই তারা জানোয়ারের মতন আচরণ করে ।
কিছু লোক আছে, যারা সিন ক্রিয়েট গ্রুপ । এরা তিলকে তাল করে। সামান্য বিষয়কে বিরাট রূপ দিয়ে লোক জড়ো করে এবং ঝগড়াটে, অশান্তিকর, যুদ্ধ সৃষ্টি করার পরিস্থিতি তৈরি করে । এরা ২ ধরনের লোক _ এদের কেউ ফিফটি পার্সেন্ট পাগল বা অশিক্ষিত বা উগ্র মেজাজের, আর এদের কেউ নাইনটি পার্সেন্ট শেয়ানা; শুধু কোনো সুবিধা নিতে বা প্রতিপক্ষকে ছোটো করতে বা টাকা উপার্জন এর ধান্দায় সিন ক্রিয়েট করে।
এমন কতোগুলো মানুষের চেহারাধারী অমানুষ আছে, যারা কাউকে ছোটো করার সুযোগ পেলেই এমনকি সবার সামনে তাকে ছোটো করে। এদের মধ্যে অনেকেই আছে, যারা প্রচলিত সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত ।
অন্যের কথা যে আন্তরিকতা সহকারে শোনে, সে নি:সন্দেহে প্রশংসার যোগ্য একজন মানুষ । যারা বাচাল এবং যারা সাজিয়ে গুছিয়ে সংক্ষেপে কথা বলতে পারে না, তাদেরও অতিরিক্ত কথা থেকে নিজেকে উদ্ধার করতে হয় ভদ্রভাবে, সুন্দর ব্যবহার সহকারে, যাতে তার মনে অবহেলাজনিত চাপা কষ্ট জমে না যায় ।
আর, ধর্মের কথা প্রচার করবেন
অন্যের শোনা কথার উপর ভিত্তি করে!!!
কারো কোনো রকমের কথা অন্ধভাবে বিশ্বাস করবেন না, সে যতই জনপ্রিয় একজন তথাকথিত আলেম বা পন্ডিত হোক কিংবা যতই জনপ্রিয় একজন বক্তা অথবা লেখক হোক।
আর, আমলহীন আলেম(কর্মহীন জ্ঞানী) ব্যক্তির ভূমিকা হচ্ছে সেই অন্ধ লোকের মতো, যে অন্ধকার রাতে চেরাগ হাতে নিয়ে পথ চলে ।
অর্থাৎ, একজন অন্ধ লোক চেরাগ হাতে নিয়ে পথ চললে সে অন্যদের উপকার করা তো দূরের কথা, বরং, অন্যদের বাড়িঘর, দোকান -পাট, আপনজন সব জ্বালিয়ে ছাই করে ফেলবে । তেমনি, একজন আমলহীন আলেমও সমাজ ও মানবতার জন্য ভয়ানক বিপজ্জনক ।
একজন মুসলিম, সে যদি ৫ ওয়াক্ত নামাজি না হয়, স্রষ্টার কাছে তার বিন্দুমাত্রও দাম নেই । কারণ, সে স্রষ্টাকে সিজদাহ্ করেনা, সে স্রষ্টার সামনে নত হয়না ; অর্থাৎ, তাকে দেখতে যতই ভদ্র মনে হোক না কেন, সে একজন বড় লেভেলের অহংকারী ।
এছাড়া, ইসলামি পরিভাষায়, সে একজন কাফের লোক। কেননা, “ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী হচ্ছে ‘নামাজ’ [সহীহ মুসলিম এর হাদীস নং ৮২] ।
অথচ, নামাজ এর গুরুত্ব বলতে গিয়ে মহান স্রষ্টা আমাদেরকে কেমন নামাজী, কেমন মানুষ হতে বলেছেন, তাও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর পাঠানো সংবিধান কুরআনে।
কুরআনের সুরা আল আনকাবুত এর ৪৫ নং বাক্যে মহান স্রষ্টা বলেন, ” নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে । “
আর একটা বিষয় ভেবে দেখুন, নামাজ আদায় না করলে কী শাস্তি, দোজখের কোন্ স্তরে শাস্তি ভোগ করতে হবে, তাও জানিয়ে দিয়েছেন সকলের স্রষ্টা । নামাজ আদায় না করলে দোজখের ‘সাকার’ নামক স্তরে শাস্তি ভোগ করতে হবে আর একথা মহান স্রষ্টা জানিয়ে দিয়েছেন কুরআনের সুরা মুদাস্সির এর ৪০ থেকে ৪৩ নং বাক্যে ।
চিন্তা করুন _
যারা নামাজ আদায় করে না অর্থাৎ যারা অহংকারী, কাফের ও যারা হবে দোজখের বাসিন্দা, তাদের নিকট থেকে নৈতিকতার, ধর্মের বাণী শোনা বড়ই হাস্যকর ও ধর্ম অবমাননাকর বিষয় ।
_ আশিক সিরাজ প্রিয়
সহকারী শিক্ষক, ইংরেজি
যোগাযোগ :
০১৫১৫ ২৫৮ ২১২