কেয়ামত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কুরআন ও হাদিস থেকে

কেয়ামত কাকে বলে এবং তা কিভাবে ঘটবে :

আজকে আমরা আলোচনা করবো কেয়ামত সম্পর্কে যা অত্যন্ত চিন্তাবহুল দিক । যদিও দুঃখের বিষয় হলো, এই আলোচনা আমাদের কপালে চিন্তার ভাজ না ফেলে কাল্পনিক অবস্থার দিকে নিয়ে যায় ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন –

إِذَا وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ যখন অবশ্যম্ভাবী ঘটনা (মহাপ্রলয়) ঘটবে

 لَيْسَ لِوَقْعَتِهَا كَاذِبَةٌ তখন এর সংঘটন অস্বীকার করার কেউ থাকবে না

خَافِضَةٌ رَافِعَةٌ তা হলো এক নিচু ও উঁচুকারক বিষয়

إِذَا رُجَّتِ الْأَرْضُ رَجًّا যখন পৃথিবীকে প্রবল প্রকম্পনে কাঁপিয়ে তোলা হবে

 وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسًّا এবং পর্বতমালা কে করা হবে পিষে চূর্ণ – বিচূর্ণ

فَكَانَتْ هَبَاءً مُنْبَثًّا ফলে তা পরিণত হবে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায়

وَكُنْتُمْ أَزْوَاجًا ثَلَاثَةً এবং (হে মানুষ ) তোমরা হয়ে যাবে তিন ভাগে বিভক্ত ।

فَأَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ অতঃপর ডান দিকের দল , যে দলটি কতই না ভাগ্যবান

وَأَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ এবং বাম দিকের দল যে দলটি কতই না হতভাগা

وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই

সূরা ওয়াকিয়াহ আয়াত ১-১০

কেয়ামত এক অবশ্যম্ভাবী ঘটনা যেটি ঘটবেই আজকে আমরা সেই মহাপ্রলয় অবশ্যম্ভাবী ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ ।

কেয়ামত সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদিস ইবনে কাসির রহিমুহুল্লাহ তার বিখ্যাত গ্রন্থ আল ফিতান ওয়াল মালাহিম এর ২য় খন্ডে বর্ণনা করেছেন যে হাদিসটি আবু হুরায়রাহ রা. আনহু থেকে বর্ণিত রাসুল্লাহ সল্লল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে যখন কেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো – قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ما الصور ؟ قال قرن. قال كيف هو ؟ قال عظيم.

যেহেতু হাদিসটি অনেক বড় আমি সংক্ষিপ্ত আকারে যতটুকু পারি ইনশাআল্লাহ আলোচনা করবো –

রাসুলুল্লাহ সল্লল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন ينفخ فيه ثلاث نفخات ، الاولى نفخه الفزع، والثانيه نفخه الصعق، والثالثه نفخه القيام لرب العالمين، يامر الله اسرافيل بالنفخه الاولى: فيقول، انفخ نفخه الفزع.

প্রথম ফুৎকার ভীতি – ফুৎকার –

وَيَوۡمَ يُنفَخُ فِي ٱلصُّورِ فَفَزِعَ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُۚ

‘তখন আল্লাহ তাআলার ইচ্ছানুরুপ ব্যক্তি ব্যতীত আসমান – জমিনের সকলেই ভীত – সন্ত্রস্ত হয়ে উঠবে । তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন ।’ সূরা নামল : ৮৭ ।

وَمَا يَنظُرُ هَٰٓؤُلَآءِ إِلَّا صَيۡحَةٗ وَٰحِدَةٗ مَّا لَهَا مِن فَوَاقٖ

আর এরা তো অপেক্ষা করছে একটি মাত্র প্রচন্ড শব্দের , যাতে দম ফেলার কোনো সুযোগ থাকবে না । সূরা সোয়াদ : ১৫ ।

يَوۡمَ تَرۡجُفُ ٱلرَّاجِفَةُ যেদিন প্রকম্পিত করবে প্রকম্পিতকারী

تَتۡبَعُهَا ٱلرَّادِفَةُ অতঃপর পশ্চাতে আসবে পশ্চাতগামী

قُلُوبٞ يَوۡمَئِذٖ وَاجِفَةٌ সেদিন ভীত – বিহ্বল হবে বহু হৃদয়

সূরা নাজিআত : ৬-৮

إِذَا زُلۡزِلَتِ ٱلۡأَرۡضُ زِلۡزَالَهَا যখন পৃথিবী তার প্রবল প্রকম্পনে প্রকম্পিত হবে

وَأَخۡرَجَتِ ٱلۡأَرۡضُ أَثۡقَالَهَا এবং জমিন তার সকল বোঝাকে বের করে দিবে

وَقَالَ ٱلۡإِنسَٰنُ مَا لَهَا (তখন) মানুষ বলবে এর (পৃথিবীর) আবার কী হলো ?

সূরা জিলজাল : (১ – ৪)

إِذَا ٱلسَّمَآءُ ٱنشَقَّتۡ যখন আকাশ ফেটে যাবে

وَأَذِنَتۡ لِرَبِّهَا وَحُقَّتۡ আর তার প্রতিপালকের আদেশ শুনে তা পালন করবে, যা (পালন করা) তার জন্য অপরিহার্য ।

(সূরা ইনশিকাক: ১ -২)

إِذَا ٱلشَّمۡسُ كُوِّرَتۡ যখন সূর্যকে নিষ্প্রভ করা হবে

وَإِذَا ٱلنُّجُومُ ٱنكَدَرَتۡ এবং নক্ষত্ররাজি খসে পড়বে

وَإِذَا ٱلۡجِبَالُ سُيِّرَتۡ এবং পর্বতসমূহকে চলমান করা হবে ।

সূরা আত – তাকবীর : ১ -৩

وَسُيِّرَتِ ٱلۡجِبَالُ فَكَانَتۡ سَرَابًا আর পর্বতমালা চালিত হয়ে মরীচিকায় পরিণত হবে

সূরা নাবা : ২০

وَتَكُونُ ٱلۡجِبَالُ كَٱلۡعِهۡنِ ٱلۡمَنفُوشِ আর পর্বতমালা হবে ধূনিত রঙিন পশমের মতো

সূরা করিয়া : ৫

وَحُمِلَتِ ٱلۡأَرۡضُ وَٱلۡجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةٗ وَٰحِدَةٗ এবং পৃথিবী ও পর্বতমালা উত্তোলিত হবে ও চূর্ণ – বিচূর্ণ করে দেওয়া হবে

সূরা হাক্কা : ১৪

فَإِذَا بَرِقَ ٱلۡبَصَرُ যখন চোখ ঝলসে যাবে

وَخَسَفَ ٱلۡقَمَرُ চাঁদ নিষ্প্রভ হয়ে যাবে

وَجُمِعَ ٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُ চন্দ্র – সূর্যকে একত্র করা হবে

يَقُولُ ٱلۡإِنسَٰنُ يَوۡمَئِذٍ أَيۡنَ ٱلۡمَفَرُّ  সে – দিন মানুষ বলবে, পালিয়ে যাওয়ার যায়গা কোথায় ?

كَلَّا لَا وَزَرَ না , না; কোনো আশ্রয়স্থল নেই

إِلَىٰ رَبِّكَ يَوۡمَئِذٍ ٱلۡمُسۡتَقَرُّ সে-দিন তো প্রত্যেককে তোমার প্রতিপালকের কাছে গিয়েই অবস্থান নিতে হবে

يُنَبَّؤُاْ ٱلۡإِنسَٰنُ يَوۡمَئِذِۭ بِمَا قَدَّمَ وَأَخَّرَ সে – দিন সকল মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হবে, সে সামনে কী পাঠিয়েছে আর পেছনে কী রেখে গিয়েছে

بَلِ ٱلۡإِنسَٰنُ عَلَىٰ نَفۡسِهِۦ بَصِيرَةٞ বরং মানুষ নিজেই নিজের সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত

وَلَوۡ أَلۡقَىٰ مَعَاذِيرَهُۥ যদিও সে নান অজুহাত পেশ করে

(সূরা কিয়ামা : ৭ – ১৫)

يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمۡۚ إِنَّ زَلۡزَلَةَ ٱلسَّاعَةِ شَيۡءٌ عَظِيمٞ ‘ হে মানুষ, নিজ প্রতিপালকের (ক্রোধকে) ভয় করো । জেনে রেখো, মহাপ্রলয়ের প্রকম্পন এক ভয়ংকর বিষয় ।

يَوۡمَ تَرَوۡنَهَا تَذۡهَلُ كُلُّ مُرۡضِعَةٍ عَمَّآ أَرۡضَعَتۡ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمۡلٍ حَمۡلَهَا وَتَرَى ٱلنَّاسَ سُكَٰرَىٰ وَمَا هُم بِسُكَٰرَىٰ وَلَٰكِنَّ عَذَابَ ٱللَّهِ شَدِيدٞ

যেদিন তোমরা তা দেখতে পাবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্যধাত্রী সেই শিশুকে (পর্যন্ত) ভুলে যাবে, যাকে সে দুধ পান করিয়েছে; এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, আর মানুষকে তুমি দেখবে – যেন তারা নেশাগ্রস্ত, অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়; বরং (সেদিন) আল্লাহর শাস্তি হবে অতি কঠোর । (সূরা হজ : ১ – ২)

يَوۡمَ تُوَلُّونَ مُدۡبِرِينَ مَا لَكُم مِّنَ ٱللَّهِ مِنۡ عَاصِمٖۗ

যেদিন তোমরা পিছনে ফিরে পালাবে; কিন্তু আল্লাহ থেকে তোমাদের রক্ষাকারী কেউ থাকবে না (সূরা গাফের – ৩৩)

وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُۖ

শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, ফলে আসমান – জমিনে যারা আছে  সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে; তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন ।  সূরা জুমার : ৬৮

قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ بَيْنَ النَّفْخَتَيْنِ أَرْبَعُوْنَ قَالُوْا يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَرْبَعُوْنَ يَوْمًا قَالَ أَبَيْتُ قَالَ أَرْبَعُوْنَ سَنَةً قَالَ أَبَيْتُ قَالَ أَرْبَعُوْنَ شَهْرًا قَالَ أَبَيْتُ وَيَبْلَى كُلُّ شَيْءٍ مِنَ الإِنْسَانِ إِلَّا عَجْبَ ذَنَبِهِ فِيْهِ يُرَكَّبُ الْخَلْقُ.

বুখারী – ৪৮১৪. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু’বার ফুঁৎকারের মাঝে ব্যবধান চল্লিশ। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আবূ হুরাইরাহ! চল্লিশ দিন? তিনি বললেন, আমার জানা নেই। তারপর তারা জিজ্ঞেস করল, চল্লিশ বছর? তিনি বললেন, আমার জানা নেই। এরপর তাঁরা আবার জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে কি চল্লিশ মাস। তিনি বললেন, আমার জানা নেই এবং বললেন, শিরদাঁড়ার হাড় বাদে মানুষের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। এ দ্বারাই সৃষ্টি জগত আবার সৃষ্টি করা হবে। [৪৯৩৫; মুসলিম ৫২/২৭, হাঃ ৯৫৫, আহমাদ ৯৫৩৩] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৫১)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ كُلُّ ابْنِ آدَمَ يَأْكُلُهُ التُّرَابُ إِلاَّ عَجْبَ الذَّنَبِ مِنْهُ خُلِقَ وَفِيهِ يُرَكَّبُ ‏”‏ ‏.‏

সহীহ মুসলিম – ২৯৫৫  আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের সব কিছুই মাটি খেয়ে ফেলবে। কেবল মেরুদণ্ডের হাড় বাকী থাকবে। এর দ্বারাই প্রথমতঃ মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এর দ্বারাই আবার তাদেরকে জোড়া লাগানো হবে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১৪৭, ইসলামিক সেন্টার ৭১৯৯)

لِّمَنِ ٱلۡمُلۡكُ ٱلۡيَوۡمَۖ لِلَّهِ ٱلۡوَٰحِدِ ٱلۡقَهَّارِ আজকের রাজত্ব কার ? (তিনবার) এক প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহর । সূরা গাফের : ১৬

هُوَ ٱلۡأَوَّلُ وَٱلۡأٓخِرُ وَٱلظَّٰهِرُ وَٱلۡبَاطِنُۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٌ

তিনিই আদি – অন্ত, তিনিই প্রকাশ্য – অপ্রকাশ্য, তিনিই সব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত ।

সূরা হাদিদ : ৩

يَوۡمَ نَطۡوِي ٱلسَّمَآءَ كَطَيِّ ٱلسِّجِلِّ لِلۡكُتُبِۚ সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেব, যেমন গোটানো হয় লিখিত কাগজপত্র ।

সূরা আম্বিয়া : ১০৪

وَٱلۡأَرۡضُ جَمِيعٗا قَبۡضَتُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَٱلسَّمَٰوَٰتُ مَطۡوِيَّٰتُۢ بِيَمِينِهِ  কিয়ামতের দিন সমস্ত যমীন থাকবে তাঁর হাতের মুঠিতে এবং আসমানসমূহ থাকবে ভাঁজ করা অবস্থায় তাঁর ডান হাতে সূরা জুমার : ৬৭

أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ يَقْبِضُ اللهُ الْأَرْضَ وَيَطْوِي السَّمَوَاتِ بِيَمِيْنِهِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ مُلُوْكُ الْأَرْضِ.

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সল্লল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত-দিবসে জমিনকে মুষ্ঠিবদ্ধ করে নেবেন এবং আকাশমন্ডলীকে ভাঁজ করে নেবেন তাঁর ডান হাতে, অতঃপর বলবেন : ‘আমিই বাদশাহ; দুনিয়ার বাদশাহরা (আজ) কোথায় ? সহিহ বুখারি : ৪৮১২ , ৬৫১৯, ৭৩৮২, ৭৪১৩

يَوۡمَ تُبَدَّلُ ٱلۡأَرۡضُ غَيۡرَ ٱلۡأَرۡضِ

যেদিন পরিবর্তিত করা হবে এই পৃথিবীকে অন্য এক পৃথিবীতে  সূরা ইবরাহিম : ৪৮

ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخۡرَىٰ فَإِذَا هُمۡ قِيَامٞ يَنظُرُونَ অতঃপর আবার শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে । ফলে তৎক্ষণাৎ তারা দাড়িঁয়ে তাকাতে থাকবে । সূরা জুমার : ৬৮

عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يُبْعَثُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا»، فَقَالَتْ عَائِشَةُ: فَكَيْفَ بِالْعَوْرَاتِ؟ قَالَ: {لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنٌ يُغْنِيهِ} [عبس: 37]

‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , রাসুলুল্লাহ সল্লল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : কিয়ামতের দিন লোকদের উঠানো হবে নগ্নপদে, উরঙ্গ ও খাতনাবিহীন শরীরে। তখন আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন : সেদিন লজ্জাস্থানের কী হবে ? তিনি বলেন  لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنٌ يُغْنِيهِ} [عبس: 37 সেদিন প্রত্যেকের নিজের এক ভিন্ন চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে ।’

كَمَا بَدَأۡنَآ أَوَّلَ خَلۡقٖ نُّعِيدُهُۥۚ وَعۡدًا عَلَيۡنَآۚ إِنَّا كُنَّا فَٰعِلِينَ  

যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব । আমার ওয়াদা নিশ্চিত; আমি তা পূরণ করবই ।  সূরা আম্বিয়া : ১০৪

مِنۡهَا خَلَقۡنَٰكُمۡ وَفِيهَا نُعِيدُكُمۡ وَمِنۡهَا نُخۡرِجُكُمۡ تَارَةً أُخۡرَىٰ

‘ এ মাটি থেকেই আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি; এতেই তোমাদের ফিরিয়ে নেব এবং পুনরায় এর থেকেই আমি তোমাদের সৃষ্টি করব ।’ সূরা ত্বহা: ৫৫

قَالَ فِيهَا تَحۡيَوۡنَ وَفِيهَا تَمُوتُونَ وَمِنۡهَا تُخۡرَجُونَ

‘তোমরা সেখানেই জীবিত থাকবে, সেখানেই মৃত্যুবরণ করবে এবং সেখান থেকেই পুনরুত্থিত হবে ।’ সূরা আরাফ : ২৫

وَٱللَّهُ أَنۢبَتَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِ نَبَاتٗا আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে মাটি থেকে উদগত করেছেন

ثُمَّ يُعِيدُكُمۡ فِيهَا وَيُخۡرِجُكُمۡ إِخۡرَاجٗا অতঃপর তাতে ফিরিয়ে নেবেন এবং আবার পুনরুত্থান করবেন । সূরা নুহ : ১৭ -১৮

مُّهۡطِعِينَ إِلَى ٱلدَّاعِۖ يَقُولُ ٱلۡكَٰفِرُونَ هَٰذَا يَوۡمٌ عَسِرٞ তারা আহ্বানকারীর দিকে দৌড়াতে থাকবে; আর কাফিররা বলবে – এ এক কঠিন দিন । সূরা কমার : ৮

فَإِذَا جَآءَتِ ٱلطَّآمَّةُ ٱلۡكُبۡرَىٰ অতঃপর যখন মহাসংকট উপস্থিত হবে

يَوۡمَ يَتَذَكَّرُ ٱلۡإِنسَٰنُ مَا سَعَىٰ সেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম স্মরণ করবে

وَبُرِّزَتِ ٱلۡجَحِيمُ لِمَن يَرَىٰ এবং দর্শকদের জন্য প্রকাশ করা হবে জাহান্নাম

فَأَمَّا مَن طَغَىٰ সুতরাং যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করেছে

وَءَاثَرَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে

فَإِنَّ ٱلۡجَحِيمَ هِيَ ٱلۡمَأۡوَىٰ তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম

সূরা নাযিয়াত : ৩৪ – ৩৮

يَوۡمَ يَفِرُّ ٱلۡمَرۡءُ مِنۡ أَخِيهِ সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভাইয়ের কাছ থেকে

وَأُمِّهِۦ وَأَبِيهِ তার মাতা, তার পিতা

وَصَٰحِبَتِهِۦ وَبَنِيهِ তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে

সূরা আবাসা ৩৪ -৩৬

وَلَا يَسۡـَٔلُ حَمِيمٌ حَمِيمٗا বন্ধু বন্ধুর খবর নেবে না; যদিও একে অপরকে দেখতে পাবে

يُبَصَّرُونَهُمۡۚ يَوَدُّ ٱلۡمُجۡرِمُ لَوۡ يَفۡتَدِي مِنۡ عَذَابِ يَوۡمِئِذِۭ بِبَنِيهِ  সেদিন গুনাহগার ব্যক্তি পণস্বরুপ দিতে চাইবে – তার সন্তান- সন্ততিকে,

وَصَٰحِبَتِهِۦ وَأَخِيهِ তার স্ত্রীকে, তার ভ্রাতাকে

وَفَصِيلَتِهِ ٱلَّتِي تُـٔۡوِيهِ তার গোষ্ঠীকে যারা তাকে আশ্রয় দিত

وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ جَمِيعٗا ثُمَّ يُنجِيهِ এবং পৃথিবীর সবকিছুকে । অতঃপর সে নিজেকে রক্ষা করতে চাইবে

كَلَّآۖ إِنَّهَا لَظَىٰ কখনই নয়, নিশ্চয় এটা লেলিহান আগুন,

نَزَّاعَةٗ لِّلشَّوَىٰ যা চামড়া তুলে দেবে                                                                            সূরা মাআরিজ ৮ – ১৮

يَٰمَعۡشَرَ ٱلۡجِنِّ وَٱلۡإِنسِ إِنِ ٱسۡتَطَعۡتُمۡ أَن تَنفُذُواْ مِنۡ أَقۡطَارِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ فَٱنفُذُواْۚ لَا تَنفُذُونَ إِلَّا بِسُلۡطَٰنٖ

হে মানুষ এবং জ্বীন সম্প্রদায়, তোমাদের যদি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সীমানা অতিক্রম করার সামর্থ্য থাকে, তবে তা অতিক্রম করো । তোমরা প্রচন্ড শক্তি ছাড়া তা অতিক্রম করতে পারবে না । (অর্থাৎ তোমাদের সেই সামর্থ্য নেই, যা দ্বারা তোমরা আল্লাহ তাআলার জিজ্ঞাসাবাদ ও আজাব থেকে পালিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবে ।)

فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ সুতরাং তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে ?

يُرۡسَلُ عَلَيۡكُمَا شُوَاظٞ مِّن نَّارٖ وَنُحَاسٞ فَلَا تَنتَصِرَانِ তোমাদের উপর ছেড়ে দেওয়া হবে অগ্নিশিখা এবং তাম্রবর্ণের ধোঁয়া; তখন তোমরা পারবে না আত্নরক্ষা করতে

فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ সুতরাং তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে ?

সূরা আর – রহমান: ৩৩ – ৩৬

وَأَمَّا مَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِۦ وَنَهَى ٱلنَّفۡسَ عَنِ ٱلۡهَوَىٰ পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে  দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশি থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে

فَإِنَّ ٱلۡجَنَّةَ هِيَ ٱلۡمَأۡوَىٰ  নিশ্চয়ই তার ঠিকানা হবে জান্নাত

সূরা নাযিয়াত : ৩৯ – ৪০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *